(১)
বাবা
তাসনিম হোসাইন
ছোট্ট আমি, হাটতে শিখে
দেখেছি তুমি কত না যতনে
নিয়েছ কোলে, খাইয়েছ মুখে তুলে।
সকাল সকাল অফিস চলে যেতে, দুপুর হতেই ঘরে ফিরে;
বিশ্রাম না নিয়ে খাইয়ে দিতে আহার আমাকে।
কোলে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে স্নান সেরে তবে খেতে।
বিকেল হলে মাঠে নিয়ে খেলেছ তুমি আমার সাথে।
পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলে দিয়েছ তুমি মলম লাগিয়ে।
বাবা যখন আমার জ্বর হত,
সারাটি রাত তুমি জেগে বসে থাকতে আমার পাশে।
ওষুধ ধ পথ্যি যা ছিল সময় ধরে খাইয়ে দিতে।
মুখে তোমার সব সময় হাসি
কখনো দেখিনি বিরক্ত হতে।
বাবা তুমি যখন জেগে আমার কপালে পট্টি দিতে?
তোমার কি কখনো ঘুম আসত না সে সময়?
ধীরে ধীরে আমি বড় হলাম, সাথে সাথে তোমার চুলে পাক ধরল।
সাদা চুল, মুখে গোঁফ- তোমার হাটাও কেমন যেন ধীর হয়ে গেলো।
চোখে তোমার চশমা, তবু তোমার দেখতে কষ্ট হত।
যখন তখন টিভির সামনে বসে তুমি ঘুমিয়ে পড়তে।
(২)
বাবা তুমি আজ নেই
কেন যেন খুব মনে হয়,
তুমি থাকলে তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম।
বই পড়ার সময় তোমার চোখের চশমাটা
শাড়ীর আঁচল দিয়ে মুছে দিতাম।
সেদ্ধ গরম ভাত দিয়ে শুটকি মাছের ভর্তা
তুমি খুব পছন্দ করতে।
তুমি বেঁচে থাকতে কখনো মনে হয় নি
রান্না ঘরে গিয়ে তোমার পছন্দের গুড়ের পায়েস রেঁধে দিতে।
আজ যখন তুমি নেই
খুব কান্না পাচ্ছে
কেন? কেন আমি এটুকু তোমার জন্য করলাম না?
কেন আমি তোমার পাশে দুদণ্ড বসে কথা বললাম না?
আজ যদি তুমি ফিরে আসো বাবা
তবে সত্যি বলছি
আমি শুটকি দিয়ে ভাত মেখে তোমায় খাইয়ে দিব।
চিরুনি দিয়ে তোমার চুল আঁচড়ে দিব।
চা বানিয়ে দুজনে বসে অনেক গল্প করব;
তোমার পাশে বসে তোমার জীবনের গল্প শুনব।
আমি জন্মাবার পর মা মারা গেলেন
তুমি আর একটা বিয়ে করলে না কেন?
জানি সেও আমার জন্য।
অথচ দেখো, আমি কেমন স্বার্থপরের মত বিয়ে করে
দিব্যি স্বামীর সংসারে চলে এলাম, তোমায় একা ফেলে।
তুমি ফোন করলে বেশি কথা বলার সময় ও পাই নি।
তুমি তোমার কাছে বেড়াতে যেতে বললে বলতাম,
‘বাবা আমার অনেক কাজ। আসব ফ্রি হলে।
এক মাস অথবা দুমাসে একবার হয়ত গিয়েছি
বড় জোর দু ঘণ্টা থেকে চলে এসেছি।
আজ বুঝি, তুমি কত একা ছিলে।
একা কোথাও বাইরেও যাওয়ার মতো শরীরের অবস্থা ছিলনা।
অথচ দেখো কি দিব্যি আমি ঘুরে বেড়িয়েছি।
বাবা তুমি ফিরে এলে
সত্যি আমি তোমায় অনেক যত্ন করব।
কিন্তু বাবা বড্ড দেরি হয়ে গেলো আমার এসব বুঝতে।
তুমি চলে গিয়েছে না ফেরার দেশে।
আর আমি?
আমি তোমার না পাওয়ার কষ্ট গুলো কিছুই অনুভব করলাম না।
আমায় মাফ করে দিও বাবা
আমায় মাফ করে দিও।
তুমি ভালো থেকো।
আমার জন্য দোয়া করো।
Chife Editor: Md. Sadiqur Rahman Rumen
© All rights reserved