সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় প্রতি বছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সকল জেলায় বন্যার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে।
ব্যাপকভাবে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়, জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছে।
গ্রামীণ জনপদের চলাচলের কাঁচাপাকা রাস্তা তলিয়ে যায় পানির নিচে।
জলের স্রোতে রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায় প্রতিবছর।
রাস্তার উপর দিয়ে হেঁটে চলাচল করা যায়না আবার নৌ চলাচলেও রাস্তাগুলো প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
বন্যা জলাবদ্ধতা পানি নিস্কাশনের অপ্রতুলতা একদিনে সৃষ্টি হয়নি।
অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণ যেখানে ব্রীজ প্রয়োজন সেখানে সরু কালভার্ট নির্মাণ। খালবিল জলাশয় বেপরোয়া ভাবে ভরাট, নদীগুলোর নাব্যতা হ্রাস ইত্যাদি অনেক কারণেই এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক অবস্থা ও অবস্থানের কারনে সড়ক পথের পাশাপাশি নৌপথও একটি গুরুত্বপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা।
কিন্তু নৌপথ এবং নৌযানের গুরুত্বের কথা আমরা ভুলে গিয়ে, এক অবাস্তব স্বপ্নে বিভোর হয়েছি।
একপাশে হাওর অন্যপাশে জীর্ণশীর্ণ নদী বা খালের মাঝে মাঝে গ্রামীণ জনপদের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হয়, পানি এপাশ থেকে ওপাশে চলাচল করার জন্য নির্মাণ করা হয়, কালভার্ট তাও প্রয়োজনের তুলনায় কম।
যাইহোক যখন বর্ষা আসে তখন দুপাশে পানি সমান হয়ে যায় অথবা রাস্তা আংশিক তলিয়ে যায়, তখন কালভার্টের ধারা কাজের কাজ কিছুই হয়না। হাওর থেকে খালে বা খাল থেকে হাওরে প্রবেশ করার কোন উপায়ও থাকেনা।
এতে পানিবন্দি মানুষের চলা চলের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। চতুর্দিকে পানি আর পানি কিন্তু নির্বিঘ্নে নৌকা চলাচল করতে পারেনা কারন ডুবন্ত কালভার্টওয়ালা রাস্তার উপর দিয়ে নৌকা পার করা যায়না। একদিকে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী, অন্যদিকে নৌকা পারাপারের প্রতিবন্ধক। কিন্তু যদি রাস্তা গুলো নির্মানের সময়, নির্মাণ ব্যায় একটু বেশি প্রাক্কলন করে হলেও। নদী খালবিলের সাথে সংযোগ রক্ষা করে, নৌ চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার জন্য, কালভার্টের পরিবর্তে উঁচু ব্রীজ নির্মাণ করা হতো। তাহলে এই দুরাবস্থার সৃষ্টি হতো না।
ঘর নির্মাণ করলে দরজার পাশাপাশি জানালাও রাখতে হয়।
তেমনি বাংলাদেশ নামক ভুখন্ডের মালিক, জনগণের পয়সা খরচ করে সরকার যে রাস্তাঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন করছেন। এটি একরোখা এবং একমুখী চিন্তা ধারা পরিচালনা উচিত নয়।
এতে দেখা যাচ্ছে এক পথ (সড়ক) তৈরি করতে গিয়ে অন্য পথ (নৌপথ) বন্ধ হচ্ছে কালভার্ট নির্মানের মাধ্যমে।
দরজা ঠিক আছে, কিন্তু জানালা দিয়ে আলো বাতাস চলাচল করেনা। এমন জানালার কি প্রয়োজন?
সুতরাং বাংলাদেশের রাস্তাঘাট অবকাঠামো নির্মাণের জন্য অসামঞ্জস্যপুর্ণ অবাস্তব পরিকল্পনা কোন মতেই কাম্য নয়। কালভার্ট প্রয়োজন আছে কিন্তু যেখানে ব্রীজ জরুরি সেখানে দায়সারা কালভার্ট নির্মাণ দায়িত্বের চরম অবহেলা।
এই অবহেলা আর অনিয়মের কারণে আজ আমরা বন্যা জলাবদ্ধতা পানিবন্দি হয়ে চরম জানমালের ক্ষতির সম্মুখীন।
এ থেকে উত্তরণের জন্য এখনি ভাবতে হবে।
সরকার জনগন সবাইকে।
কারণ সরকারের পাশাপাশি জনগণের ও দায় আছে নিজেদের পরিবেশ পরিস্থিতির ভারসাম্য রক্ষায়।
কারণ গ্রামীণ জনপদের অনেক রাস্তাঘাট ও স্থানীয় জনগণের পরিকল্পনায় তৈরি হয়।
আর যেখানে সরকারি কাজ চলে সেখানে অনিয়ম দেখলেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, সম্মিলিত এলাকার জনগণের স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ দিতে হবে।
সর্বোপরি সরকার কে ভাবতে হবে জনগণ আর জনপদ টিকে থাকলেই রাজত্ব ঠিক থাকবে। সবাইকে সৎ হতে হবে স্বার্থপরতা বাদ দিয়ে সমাজ এবং সমষ্টির চিন্তা করতে হবে। কারণ যদি প্রতিবেশীর ঘরে আগুন লাগে, আর তুমি যদি পানি হাতে অগ্রসর না হও। তবে তোমার ঘর পুড়াতে আগুন খাতির করবেনা, আগুন এত স্বার্থপর নয়।