1. info@www.kalomerkarukaj.com : কলমের কারুকাজ :
  2. sadikurrahmanrumen55@gmail.com : Sadiqur Rahman Rumen : Sadiqur Rahman Rumen
সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ অপরাহ্ন

পদত্যাগের পর যেভাবে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা, গন্তব্য লণ্ডন

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০২৪
  • ১৪৩ বার পড়া হয়েছে

(ছবিতে: সেনাবাহিনী প্রধানের উপস্থিতিতে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করছেন শেখ হাসিনা)

গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন, ছাড়লেন দেশ
বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে তিনি ভারতে গেছেন, গন্তব্য লন্ডন।

সাড়ে ১৫ বছর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হল।

বিবিসি লিখেছে, শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশ ছেড়েছেন। তার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানাও রয়েছেন। তারা গেছেন ভারতের আগরতলায়।

সেখান থেকে সন্ধ্যায় দিল্লি লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্ডন এয়ারবেসে নেমেছে শেখ হাসিনাকে বহনকারী সামরিক বিমান।

এনডিটিভি লিখেছে, তিনি শিগগিরই লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন বলেও খবর এসেছে ভারতের ইংরেজি দৈনিক হিন্দুর প্রতিবেদনে।

এদিকে সর্বাত্মক অসহযোগের মধ্যে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া জনতা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনও দখল করে নিয়েছেন। সেখানে তাদের উন্মুত্ত উল্লাসের দৃশ্য মনে করিয়ে দিয়েছে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে জনতার উল্লাসের স্মৃতি।

আর ঢাকার পথে পথে জনতার উচ্ছ্বাস আর সেনা সদস্যদের সঙ্গে তাদের হাত মেলানোর দৃশ্য ১৯৯৬ সালের মার্চে প্রবল আন্দোলনের মুখে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার পদত্যাগের পরের পরিস্থিতি স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছে।

এর মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান।

তিনি বলেছেন, প্রতিটি হত্যা, অবিচারের বিচার হবে। সবার চেষ্টায় দেশে শান্তি ফিরে আসবে।

যেভাবে পতন

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে জারি করা পরিপত্রটি হাই কোর্ট বাতিল করার প্রতিক্রিয়ায়।

১ জুলাই মাঠে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের টানা কর্মসূচির মধ্যে সরকারও হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে, ফলে সেই আদেশ স্থগিত হয়ে যায়।

পরিস্থিতি পাল্টে যায় ১৪ জুলাই। সেদিন চীন সফর নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এক প্রশ্নে বলেন, “মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কোটা পাবে না তো কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পাবে?”

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল বের হয় ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার, রাজাকার’। কিছুক্ষণ পর সেই স্লোগান পাল্টে বলা হয়, ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।

সেই রাতেই ছাত্রলীগ মিছিল বের করে, ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি।’

পরদিন সকালে ওবায়দুল কাদের এক বক্তব্যে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঔদ্ধত্বের জবাব দেবে ছাত্রলীগ।”

সেদিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৬ জুলাই সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়।

সেদিন সংঘর্ষে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে ছাত্রদল নেতাসহ তিন জন, ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে ছাত্রলীগ কর্মী ও এক হকার এবং রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গুলিতে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়।

১৭ জুলাই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচার পাবে।

তবে পরের দিন কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির ডাক আসে শিক্ষার্থীদের তরফে। সেদিন ঢাকার বাড্ডা ও উত্তরায় সংঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতির অবনতি ঘটে।

দুপুরের পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা হতে থাকে। পরের তিন দিন ধরে চলে সংঘর্ষ, প্রাণহানি ঘটে দুই শতাধিক মানুষের।

পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে কখনো ৮ দফা, কখনো ৯ দফা দাবি জানানো হয়। ঘটনার পরম্পরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ থেকে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি জানানো হয়।

পরদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে সারাদেশে পুলিশসহ শখানেক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ওইদিন সন্ধ্যা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তরফে সোমবার ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সোমবার বেলা ১১টার পর থেকে লাখো জনতা ঢাকার শাহবাগসহ বিভিন্ন অংশে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরইমধ্যে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান জানান, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন।

আগুনে জ্বলছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।
আগুনে জ্বলছে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর।

ফের নির্বাসন

স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সপরিবারে হত্যা করা হয়। তার দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। স্বামী ওয়াজেদ মিয়ার কর্মসূত্রে জার্মানিতে ছিলেন শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা গিয়েছিলেন বোনের কাছে বেড়াতে।

দেশে স্বজনদের হারিয়ে এরপর নির্বাসিত জীবন শুরু হয় শেখ হাসিনার, আশ্রয় পান ভারতে। ছন্নছাড়া আওয়ামী লীগকে এক করতে ১৯৮১ সালে দলের ত্রয়োদশ কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি।

১৯৯৬ সালে ভোটে জিতে শেখ হাসিনা প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন, ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আবারও বিরোধীদলে যান শেখ হাসিনা।

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। এরপর টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেন।

এর পরের তিন নির্বাচনে নানা বিতর্কের মধ্যেও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পেরেছিলেন শেখ হাসিনা। এবার গণআন্দোলনের মধ্যে তাকে পদ ও দেশ ছাড়তে হল।

নিউজ সুত্রের কৃতজ্ঞতা: বিডি নিউজ ২৪ ডটকম

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং