1. info@www.kalomerkarukaj.com : কলমের কারুকাজ :
  2. sadikurrahmanrumen55@gmail.com : Sadiqur Rahman Rumen : Sadiqur Rahman Rumen
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন

✈️কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ও মহাশূন্যে প্রথম বলিদানের ইতিবৃত্ত, -মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন✈️

Tamikio L. Dooley
  • প্রকাশিত: সোমবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪
  • ৬৭০ বার পড়া হয়েছে

কবি: রেজাউদ্দিন স্টালিন

কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন ও মহাশূন্যে প্রথম বলিদানের ইতিবৃত্ত

মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন

কবিতা:

 মহাশূন্যে প্রথম বলিদান

রেজাউদ্দিন স্টালিন 

তার দুচোখ ঝকঝকে তারার সহোদর 

মহাশূন্যের বাড়িতে যাচ্ছে সে

আকাশের ভয়ার্ত দৃশ্যরা

শরীরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে

মহাকাশে তার সাথে কি দেখা হবে দেবদূতদের 

জিউস কি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন

আর সে লেজ দুলিয়ে জানাবে কৃতজ্ঞতা 

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে অন্ধকার 

অগ্নিভূক কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে আসে চোখ

মনে পড়ে মনিবের আদুরে ডাকে – আহ্লাদে আটখানা হবার কথা

নভোযানের জানালায় চারদিক থেকে ছুটে আসছে লক্ষ লক্ষ সিসার বর্শা 

তার ঘুম জড়ানো চোখে অশ্রুর আনুগত্য 

মনে পড়ছে মনিব কণ্যার প্রেমময় আদল

চোখের আড়াল হলে-খুঁজতো

লা-ই-কা—- লা-ই-কা———-

মাথা উঁচু করে শুনছে প্রতিধ্বনি 

লাইকা জানে না চান্দ্র কিংবা সৌরমাসের হিসাব 

তবু ১৯৫৭ খৃষ্টাব্দ-৩রা নভেম্বর গলে গলে পড়ছে উপগ্রহের চোয়ালে

প্রবল সৌরঝড়েও অপ্রতিহত 

স্পুটনিক দুই ভেদ করে যাচ্ছে আয়নোস্ফিয়ার

লাইকার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি 

প্রতিটি দৃশ্যকে বলছে আমি কোথায়

আমাকে কেউ ডাকছে না কেনো

তন্দ্রার ঘোরে -মহাকাশ ধমক হানছে -চুপ – বিজ্ঞানের অমর প্রাণী তুমি

ক্লান্ত অবসন্ন ধীরে ধীরে লাইকা ঘুমিয়ে পড়ে জীববিদ্যার পাতায়

আর কোনোদিন ফেরা হবে কি না প্রিয় পৃথিবীতে

জানে না সে।

 ইতিহাস:

 (লাইকা আক্ষরিক অর্থে যে ঘেউ ঘেউ করে) ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া একটি বেওয়ারিশ কুকুর 

১৯৫৭ সালের ৩রা নভেম্বর উৎক্ষেপণ করা সোভিয়েত রাশিয়ার নভোযান-২ এ চড়ে, মহাকাশ ভ্রমণ করেছিল।

রুশ মহাকাশযানে পৃথিবীর প্রথম জীব হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ পরিক্রমনের সৌভাগ্য অর্জনকরে। দুর্ভাগ্যক্রমে পৃথিবীতে ফেরত না এসে মহাকাশেই মৃত্যু হয় তাঁর। 

তখন এ ঘটনা সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীমহলে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি করে। লাইকার প্রতি মানুষের সহানুভূতি থেকে সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নে পোস্টার, সিগারেটের প্যাকেট, ম্যাচ বাক্স থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যে লাইকার ছবি ও কার্টুন স্থান পেতে থাকে, ছাড়া হয় লাইকার ছবিযুক্ত বিশেষ ডাকটিকিট ও খাম। ২০০৮ সালে রাশিয়ার একটি সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানে লাইকার স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়।

 লাইকাকে মহাকাশে পাঠানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই পরে অনুশোচনা ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন কুকুরটিকে জেনেশুনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য। পরবর্তী সময়ে মহাশূন্যে আরও অনেক প্রাণী পাঠানো হলেও সেগুলোকে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়েই পাঠানো হয়। লাইকার মৃত্যু সবাইকে ব্যথিত করলেও এ অভিজ্ঞতা থেকেই বিজ্ঞানীরা মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রচেষ্টায় অনেকটা পথ এগিয়ে যান। তাই মহাকাশ জয়ের ইতিহাসে লাইকার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 *আলোচনা:

 উপরে বর্ণিত হয়েছে পূর্ব ইতিহাস।

তারপরের ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন বাংলাদেশের সমকালের এক উল্যেখযোগ্য শক্তিমান কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন।

তিনি লাইকা স্মরণে, এলিজি লিখেছেন: “মহাশূন্যে প্রথম বলিদান” শিরোনামে। পূর্বোক্ত বর্ণনায় আমরা লাইকার প্রতি নিবেদিত কোন কবির কবিতা লেখার হদিস খুঁজে পাইনি। আমরা পেয়েছি একমাত্র কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন এর পরম মমতায় লেখা অবলা এই প্রাণীটির মনোবিশ্লেষনের বাক্যবিন্যাস।

লাইকা নামক কুকুরটি হলো মানুষের মহাকাশ বিজয়ের যুদ্ধে এক অগ্রসৈনিক, মহাকাশ বিজয়ের ইতিহাসের অমর শহীদ। কবির বর্ণনায় তাঁর চোখ তারার সহোদর, সে তারার দেশে আগন্তুক। অতঃপর কবি কল্পনা করেন মহাকাশের ভয়াল পথ পরিক্রমন শেষে সে মহাকাশে দেবদূতের সাক্ষাত পাবে, জিউস হয়তো তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশির্বাদ করবেন। লেজ দুলিয়ে সে কৃতজ্ঞতা জানাবে। কিন্তু স্পুটনিক-২ যত উর্দ্ধমুখী হয়, ততই সে স্মৃতিকাতর হয় চিরচেনা মায়াবী পৃথিবীর! মনে পড়ে মনিবের ডাক, মনিব কন্যার আদুরে মুখের আদল। কিন্তু উর্দ্ধমুখী অগ্নিরথ তার এই নিম্নমুখী আবেগের তোয়াক্কা করেনা। মহাশূন্যের মহাধমক শুনে সে! আকাশ বাতাস আন্দোলিত হয়ে তার কানে বেশে আসে, গুরুগম্ভীর স্বান্ত্বনা: বিজ্ঞানের আশির্বাদে তুমি মরে অমর হতে চলেছো, সুতরাং সস্তা আবেগ ত্যাগ করো।

সে আস্তে আস্তে স্তিমিত শমিত নিস্তেজ হয়ে পড়ে! ঘুমঘোরে নিমজ্জিত হয়! অক্সিজেন বিহীন উর্দ্ধাকাশে তার নিঃশ্বাসের বিশ্বাস ফুরিয়ে যায়।

সে জানেনা সে কোথায় কোন গন্তব্যে চলেছে, বেপরোয়া অগ্নিরথের যাত্রী হয়ে। সে জানেনা প্রিয় পৃথিবীতে আর প্রত্যাবর্তন হবে কিনা?

অবশেষে লাইকা আর তার নভোযান পৃথিবীর মাটিতে আর ফিরেনি। ফিরতি পথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেই ভস্মিভূত হয়ে মহাশূন্যে মিলিয়ে যায় লাইকার বাহন আর মরদেহ।

এর পর প্রায় সত্তর বছরের ব্যবধানে এই মর্ত্তলোকের এক কবির কলমের কালি অশ্রুতে পরিণত হয় লাইকার স্মরণে। কবি রচনা করেন শোকার্ত এলিজি মহাশূন্যে প্রথম বলিদান।

আন্তরিক অভিনন্দন জানাই প্রিয় কবি রেজাউদ্দিন স্টালিন। আপনি, মহাকাশের শহীদ এই অবুঝ অবলা প্রাণীর প্রতি মনুষ্য সভ্যতার যে ঋণ তা পরিশোধের চেষ্টা করেছেন দরদী বাণী অর্চনায়।

 অবলা এই প্রাণীটির মহাকাশ বিজয়ের পথে আত্মাহুতি, কবির দৃষ্টিতে মহাশূন্যে প্রথম বলিদান।

 (কবি: পরিচিতি)

কবি: রেজাউদ্দিন স্টালিন

বাংলা ভাষার সমকালের অন্যতম শক্তিমান কবি।

গ্রন্থ সংখ্যা: শতাধিক, পেয়েছেন বাংলা একাডেমি, মধুসূদন, সব্যসাচী, সিটি আনন্দ আলো, খুলনা রাইটার্স ক্লাব, তরঙ্গ অব ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাজ্য জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, দার্জিলিং নআট্যচক্র পুরস্কার, নিকোলাই গোগোল ট্রায়াম্প পুরস্কার সহ বহু পুরস্কার ও সম্মাননা।

আলোচক:

মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন,

কবি লেখক ও সাহিত্য সমালোচক।

কবিতা কুটির,

জামালপুর পুর। জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ, বাংলাদেশ।

Published By.

Tamikio L.Dooley, Michigan America. Editor In Chief-PEN CRAFT literature.

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: বাংলাদেশ হোস্টিং