২১ শে ফেব্রুয়ারি মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবসে। মহান ভাষা শহীদদের স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি সহ, আমার লেখা: মহান ভাষা দিবসের ইতিহাস ভিত্তিক, কবিতাটি নিবেদন করছি।

মোঃ সাদিকুর রহমান রুমেন

দুই ভগ্নি

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আর সাভারের স্মৃতিসৌধ আপন দুই ভগ্নি, দুজনেই অগ্নিগর্ভা বাংলা মায়ের ঝি, দুধের গুনে যেমন ঘি মায়ের গুনে তেমন ঝি! তাই এই দুই ভগ্নি ও তাদের মায়ের মত অগ্নিগর্ভা! দু’জনেই অজস্র বিপ্লবী আর লাখো মুক্তিযোদ্ধার প্রসুতি! বঙ্গ জননী ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি (৮ ই ফাল্গুন) তার বড়কন্যা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রসব করেন! তার ১৯ বছর পর ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ তার জঠর থেকে ভূমিষ্ট হয় ছোট কন্যা কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ। ছোট হওয়ায় এটি মায়ের আদরও বেশি পায়। এতে বড়বোনের কোন অনুযোগ-অভিমানও নেই। তিনি বড় আদরের চোখে দেখেন ছোট ভগ্নিটিকে! বড় কন্যাটির জন্মের আগে বঙ্গ জননীকে বাধ্য ও নিরুপায়ের মত উর্দু ভাষায় কথা বলতে হতো!

কিন্তু এই সরলা গৃহস্থ কন্যার উপর, দুর্বৃত্তদের জোড় করে চাপিয়ে দেওয়া এই রাজভাষাটি তার বড় না পছন্দ ছিল। বড় কন্যার জন্মের পর তার এই মর্ম যাতনার অবসান হয়। কিন্তু এই জন্মের ইতিহাস বড় রক্তাক্ত করুণ।

একের জন্ম, অজস্রের মৃত্যু! উপলক্ষ মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে শাহাদাত বরণ। শাহাদাত বরণকারী কয়েকজনের নাম আমরা জানি তারা ঢাকা ম্যুনিভার্সিটির তরুণ ছাত্র, সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার আরো অনেকেই ছিলেন যাদের নাম আমরা জানতে পারিনি।

এই মৃত্যু এবং জন্মের অনুষ্টানের মধ্যদিয়ে

শহীদেরা পেলেন অমরত্বের মহান সনদ,

বাঙালি পেল বাংলা ভাষার সোনালি বর্ণমালায় লেখা ঝলমলে বাল্যশিক্ষা। এদেশে চিরতরে উর্দু ভাষায় বাক্যালাপ বন্ধ হল। বাংলা মা তার নিজের ভাষায় নির্ভয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। জন্ম মৃত্যুর এই করুণ মধুর ক্ষণটিকে বিশ্ববাসীর বড় পছন্দ হল তারা এই দিনটিকে অন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য বেছে নিলেন। আমরা এজন্য সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে কী যে কৃতজ্ঞ! তা প্রকাশের ভাষা এই নগণ্যের জানা নেই।

কিন্তু বিশ্ববাসীর এই মহান স্বীকৃতিই প্রমাণ করে আমরা ন্যায় দাবির পক্ষে প্রাণদান করেছিলাম। আর যারা আমাদের তাজা প্রাণগুলি হরণ করেছে তা কী মারাত্মক অন্যায় ছিল? তাই আজ আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের প্রাণ দানের গর্বে গরীয়ান আর আমাদের আততায়ী প্রাণ হরণের লজ্জায় ম্রিয়মান।

এমনটাই হয় খাঁটি প্রেম এবং ন্যায়ের আত্মত্যাগ তার যোগ্য মর্যাদা একদিন পায়। মজলুমের সামনে জুলুম একদিন নতশির হয়। এক্ষণে সমবেত সকলেই সম্ভবতঃ ছোট ভগ্নির জন্ম বৃত্তান্ত জানতে কৌতুহলি রয়েছেন? সে কথা ২৬ মার্চে তার জন্মদিনে বলার আশা রাখি।

প্রকাশনায় : Tamikio L Dooley Michigan America Editor In Chief-PEN CRAFT literature.